পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা (DA news) নিয়ে যে ক্ষোভ রয়েছে সেকথা আমাদের সকলেরই জানা। মহার্ঘ ভাতা (DA news) নিয়ে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট সব পর্যায়ে পরাজিত হয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই সমস্ত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (DA news) মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোন সদর্থক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি রাজ্য সরকারকে। তাই বিষয়টি গড়ায় আন্দোলন পর্যন্ত। এই আন্দোলনের দরুন রাজ্য সরকার দুই দফায় মোট ৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়িয়েছে। তারই ফলস্বরূপ বর্তমানে মূল বেতনের ১৪ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক শিক্ষিকারা। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো তাতেও তারা প্রত্যেকে খুব একটা খুশি নন। কারণ হিসাব করলে দেখা যাবে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে মহার্ঘ ভাতার (DA news) ফারাক প্রায় ৩৬ শতাংশ। কানা ঘুষোয় শোনা যাচ্ছে, আগামী জুলাই মাসে আরো এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতা দিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার যদি তার কর্মচারীদের আরো ৪ বা ৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয় তবে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার ফারাক হয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৪০ শতাংশ। তাই মহার্ঘ ভাতার (DA news) বিষয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা যে রাজ্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করবে সে কথা বলাই যায়।
কিন্তু এই মহার্ঘ ভাতার (DA news) খবরের মাঝেই নতুন একটি খবর উঠে আসছে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যেকোনো একজন যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন এবং অপরজন যদি সরকারি বা সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা শিক্ষিকা হয়ে থাকেন, তবে ওই শিক্ষক বা শিক্ষিকার বাড়ি ভাড়া ভাতা অর্থাৎ হাউস রেন্ট এলাউন্স বন্ধ করতে পারবে না রাজ্য সরকার। এই মর্মেই হাইকোর্টে একটি কেস ফাইল হয়। আর সেই সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক বিশ্বজিৎ বসু মহাশয়।
এই সংক্রান্ত মামলাটি দাখিল করেন টালিগঞ্জ বাঙুর হাই স্কুলের অর্থনীতির শিক্ষিকা মুকুলিকা মান্না মহাশয়া। সেই মামলাতে তার সঙ্গী হন কলকাতা হাওড়া হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত আরও ১৩ জন শিক্ষিকা। এই সমস্ত শিক্ষিকাদের বাড়ি ভাড়া ভাতা বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। কারণ তাদের প্রত্যেকেরই স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার অপেক্ষা ৩৬ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (DA news) কম ও অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া ভাতা বন্ধ হওয়ায় এই সমস্ত শিক্ষিকাগণ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
মহামান্য হাইকোর্ট বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন। সেইসঙ্গে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ পুরোপুরি আইন ব্যবস্থার বিরোধী। তিনি অবিলম্বে ওই ১৪ জন শিক্ষিকার বাড়ি ভাড়া ভাতা চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ভাতা চালু করতে হবে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে। শুধু তাই নয়, তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন যেদিন থেকে ওই বাড়ি ভাড়া মত বন্ধ হয়েছে সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত বকেয়া ৬% সুদসহ মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আগামীতে মহার্ঘ ভাতা (DA news) সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে এই রায় যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১২ সালে রাজ্য সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী যদি স্বামী বা স্ত্রীর যেকোনো একজন বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত হন তবে সেই সমস্ত সরকারি শিক্ষক বা শিক্ষিকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন না। যদিও ২০২১ সালে সেই রায় বাতিল করে দিয়েছিল মহামান্য হাইকোর্ট। সুতরাং আইনগত দিক দিয়ে দেখতে গেলে সেই নির্দেশিকা এই মুহূর্তে অস্তিত্বহীন। সুতরাং এই সমস্ত শিক্ষিকার বাড়িভাড়া ভাতা বন্ধ করে রাখা পুরোপুরি আইন বিরুদ্ধ। পরবর্তী সময়ে মহার্ঘ ভাতা (DA news) আদায়ের আন্দোলনে এই রায় অনেকটা অক্সিজেন যোগাবে সরকারি কর্মচারীবৃন্দ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা মহলকে।