১৯৯৫ সাল থেকে ভারতবর্ষে মিড ডে মিল (Mid Day Meal) পরিকল্পনা চালু হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার হাত ধরে। এই মিড ডে মিল (Mid Day Meal) পরিকল্পনা নিয়ম অনুসারে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর সকল পড়ুয়া অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে মধ্যাহ্নভোজ পেয়ে থাকে। সেই মিড ডে মিলের সাপ্তাহিক মেনু সরকারের তরফে ঠিক করে দেওয়া আছে। সেই সরকারি মেনু অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন ছাত্র-ছাত্রীদের পাতে ডিম পড়ার কথা। কিন্তু সরকারি বরাদ্দে সেই ডিম দিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষক শিক্ষিকারা। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানবো আজকের প্রতিবেদনে।
রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে টাঙানো আছে সাপ্তাহিক প্রতিদিনের মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) মেনু। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ বর্তমানে মাথাপিছু ছাত্র-ছাত্রী যে বরাদ্দ করেছে সরকার, তাতে সামান্য আনাজ দিয়ে তরকারি, ডাল ও সয়াবিন রান্নাও এখন চ্যালেঞ্জের থেকে কিছু কম নয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের থেকেও এই বছর মিড ডে মিলের বরাদ্দ কমেছে। অথচ ২০২২ সালে তুলনায় এই মুহূর্তে আনাজ, ডাল, সয়াবিন, মশলা ও জ্বালানির খরচ বহু ধাপে বেড়েছে। শিক্ষকদের প্রশ্ন এই বাজেটে কিভাবে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিকের প্রায় লক্ষাধিক পড়ুয়ার মিড ডে মিল চালানো সম্ভব?
মিড ডে মিলে (Mid Day Meal) মেনু অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন পড়ুয়াদের ডিম খাওয়ানোর কথা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তা কি করে সম্ভব? যেখানে একটা ডিমের দাম প্রায় সাড়ে ছ টাকা। সেখানে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের মাথাপিছু বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। অন্যদিকে শিক্ষকরা জানাচ্ছেন এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম কিছুটা কম হওয়ায় মিড ডে মিল চালানোয় স্বস্তি পাওয়া গেছে। কারণ গ্যাসের দাম যখন প্রায় ১২০০ টাকা ছিল তখন সপ্তাহে অধিকাংশ দিনই খিচুড়ি খাওয়ানো হতো। কারণ খিচুড়ি রান্নাতে জ্বালানি অনেকটা সাশ্রয় হয়।
এক জন প্রধান শিক্ষক জানান যে, তার স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর সকালবেলা কিছু না খেয়েই বিদ্যালয়ে আসেন। মিড ডে মিল (Mid Day Meal) তাদের দিনের প্রথম খাবার। আর সেখানেও যদি অপুষ্টি হয় সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি আরো জানান যে, ৫ টাকায় যেখানে আজকের বাজারে একটা বিস্কুটের প্যাকেট হয় না সেখানে দৈনিক মিড ডে মিল চালানো কিভাবে সম্ভব?
বীরভূমের এক প্রধান শিক্ষিকা জানান যে প্রত্যেকদিন প্রার্থনা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। সকাল বেলা তারা কিছুই না খেয়েই বিদ্যালয়ে চলে আসে। মিড ডে মিল (Mid Day Meal) এই তারা প্রথম খাবে। সেখানে প্রাথমিকে মাথাপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে মাথাপিছু ৮ টাকা ১৭ পয়সা দিয়ে পুষ্টি কিভাবে সম্ভব। তিনি আরো বলেন শিক্ষার অধিকার আইনে পর্যাপ্ত পুষ্টি তো হবে এ কথা স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু বাজেটে সেই সংক্রান্ত কোনো প্রতিফলন নেই।
রাজ্যের একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকাদের মতে মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) মেনু অনুযায়ী একদিন সয়াবিন, এক দিন খিচুড়ি ও একদিন ডিম দেওয়ার কথা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো ওই বরাদ্দ দিয়ে সামলানো গেলেও ডিমের দিন সামলানো খুবই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। মিড ডে মিলে রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ শতাংশ খরচ বহন করে থাকে। সুতরাং তারা দুই সরকারের কাছেই বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আবেদন করছেন।